আবদুল্লাহ আল আজিজ ::
১২ বছরের মেয়ে শাহেদা আকতার রিফা। শখ তার ফুটবল খেলা। শিশুকাল থেকে বাড়ির উঠান ও পাড়ার মাঠে খেলার ছলে খেললেও ২০১৩ সাল থেকে খেলাটাই তার পেশা হয়ে উঠেছে।
উখিয়া উপজেলার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনাইছড়ি গ্রামের দারিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা ছোট্ট রিফা এখন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে ফুটবল খেলে সুনাম কুড়াচ্ছে।
বিকেএসপিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শাহেদা আক্তার রিফা বিস্ময় ফুটবলার কন্যা বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
২০১৩ সালে সোনাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল তার খেলোয়াড়ি জীবন।
উখিয়ার ক্ষুদে এই ফুটবল খেলোয়াড়ের পরিবারের দুঃখ-কষ্টের গল্প শুনলে যে কারো চোখের জল এসে যাবে। রিফা দারিদ্র্যকে জয় করে সাফল্যের বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। বর্তমানে ভারতের মাঠিতে সুব্রত মুখার্জী ফুটবল টূর্ণামেন্টে বাংলাদেশের বিকেএসপির পক্ষে খেলছে।
তার পিতা জালাল আহমদ (৫০) পেশায় একজন দিনমজুর। মা শামশুর নাহার (৪০) অস্বচ্ছল সংসার সামলাতে ব্যস্ত। অভাবের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদেরকে। বাড়ি ভিটা ছাড়া কোনো সহায়-সম্পদ নেই। দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে ওঠা ক্ষুদে রিপা অদম্য ইচ্ছা পূরণে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই শুরু করে। মেয়ের খেলাধুলাতে সরঞ্জাম যোগাতে নানা প্রতিকূলতা পার করতে হয়েছে। সেই খেটে খাওয়া মুখগুলোই আজ মেয়ের আলোয় উজ্জ্বল। তাদের মেয়ে প্রতিটি পর্যায়ের খেলায় অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছে। তার বাবা এখন আর দারিদ্রতার কষ্টকে কষ্ট মনে করেন না। রিফার সাফল্যের গল্পে সে একজন সুখী মানুষ হয়ে উঠেছে।
বিকেএসপি মহিলা ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় রিফা, আক্রমণ ভাগে দাঁড়িয়ে বিশ্ব বরেণ্য মেসির আদলে করেছে প্রতিটি গোল। এ কারণে স্কুল এবং পাড়ায় তার নাম দেয়া হয় মেসি। প্রতি বছর এ টুর্নামেন্টে বিদ্যালয়ের হয়ে তার নৈপুণ্য রিফা নামটি আড়াল করে দিয়েছে। এলাকায় এখন মেসি নামেই বেশি পরিচিতি তার।
ভারতের মাটিতে সুব্রত মুখার্জী ফুটবল টূর্ণামেন্টে কৃতিত্বের সঙ্গে খেলা খেলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ২০১৩ সালে সে যখন ২য় শ্রেণির ছাত্রী তখন খেলা শুরু করে। সে প্রতিটি খেলায় সে অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে আসছে। সে গত বছর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলে চট্রগ্রাম বিভাগে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছে। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে তার স্কুল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তার অদম্য ইচ্ছায় টানা তৃতীয় বারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলার পরে বিকেএসপি’তে ট্রায়েল দেয়। ট্রায়েলে সে বাংলাদেশের শ্রেষ্ট খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়। এছাড়া সে অসংখ্য বার সর্বোচ্চ গোলদাতা, ম্যান অব ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছে।
বর্তমানে সে ভারতে মাঠিতে বিকেএসপির হয়ে প্রথম ম্যাচে ত্রিপুরা রাজ্যের বিরুদ্ধে মাত্র ৪০সেকেন্ডে গোল করে সুনাম অর্জন করেছে। এছাড়া সে ধারাবাহিক ভাবে দিল্লির ও হরিয়ানা প্রদেশের বিরুদ্ধে ১টি করে গোল করে দলের জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখে।
রিফার ব্যাপারে তার আপন বড়ভাই ফারুক হোসাইন ও স্থানীয় প্রতিবেশী নুরুল আবছার নান্নু জানান, রিফার ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলার খুব শখ থাকায় পরিবার থেকে তাকে বাধা দেয়া হয়নি। অভাব অনটনের মাঝেও পরিবার থেকে তাকে খেলার উৎসাহ যোগিয়েছি। আজ আমার বোন এতদুর আসার পেছনে এলাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায়।
বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানায় সানা উল্লাহ ও শামশুল আলম সোহাগের প্রতি, তারা আমার বোনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ছোট্ট রিফার মনে সাহস যোগিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দেয়ায় আমার বোন আজ এতদুর আসতে পেরেছে। দেশবাসীর কাছ থেকে ছোট বোনের জন্য দোয়া চাই।
ক্ষুদে ফুটবলার রিফা (মেসি) খেলার প্রশংসা করে জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব নুরুল আমিন চৌধুরীর বড় ছেলে চট্টগ্রাম জর্জ কোর্টের তরুণ আইনজীবি শাহ আমিন চৌধুরী বলেন, ক্ষুদে মেসি ভারতের মাঠে এতো চমৎকার নৈপুণ্য দেখিয়েছে, মাঝে মাঝে মনে হয় বড়দেরও হারিয়ে মানিয়ে দিয়েছে। আমি দোয়া করি মেসি যেন আরো ভালো খেলা আমাদের উপহার দিতে পারে। আশা করছি মেসি আমাদের ইউনিয়ন তথা পুরো দেশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখবে। তিনি যারা মেসিকে এতদূর আসতে সহযোগীতা করেছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং মেসির উজ্জল ভবিষ্যত কামনা করেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন, ‘আমি প্রতি বছরই রিফার খেলা দেখেছি। মেসি-নেইমারের মতো ক্ষীপ্রতায় গোলে আক্রমণ করে ক্ষুদে এ নারী ফুটবলার। শুরুতে যখন বিকেএসপির মতো জায়গায় গেছে তাই খেলার প্রতি যত্নশীল হলে ভবিষ্যতে নাম করা খেলোয়াড় হবে রিফা।’
পাঠকের মতামত